খাল দিয়ে ঢুকবে পানি, বদলাবে কৃষি

শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল হয়ে ঢুকবে পানি। খাল দিয়ে সে পানি নামবে সিলেটের জকিগঞ্জসহ চার উপজেলার হাওর ও বিলে। সেচ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদের আওতায় আসবে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি। হাওর ও বিলে বাড়বে মাছের উৎপাদন। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় কুশিয়ারা থেকে প্রতি বছর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে জকিগঞ্জসহ পাশের চার উপজেলার কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানান, সিলেটের সবচেয়ে কৃষিনির্ভর উপজেলা জকিগঞ্জ। সেচ সুবিধা থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও একসময় এ উপজেলায় প্রচুর ধান ও রবিশস্য উৎপদন হতো। রহিমপুরী খাল, সেনাপতির খাল, মছকন্দর খাল, শিকার মাহমুদ খাল, নাথের খাল, পীরের খাল, মাদারখাল, তেলিখাল, মিলিটারি খাল, কাপনা খাল, জায়গীরদারি খাল, বরজান খাল, বিয়াবাইল খাল, শিবের খাল, বাবুর খাল, ছাগলী খাল, কুদালী খাল, হাতিদাড়া খাল, কুনাই খাল, মরইর খাল, মুরাদ খাল, সুনাম খালসহ শতাধিক খাল দিয়ে পানি গিয়ে নামত মইলাট ও বালাইর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে। কিন্তু খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় যৌবন হারায় হাওর ও বিলগুলো। সেচের সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।
এ অবস্থায় অনাবাদি কৃষিজমি আবাদের আওতায় আনতে ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আপার সুরমা কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। খনন করা হয় সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল ও সাড়ে ৩৯ কিলোমিটার সেচ খাল। ২০১১ সালে প্রকল্পের অধীন রহিমপুরী খাল খনন ও পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৬ সালে সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। প্রায় ১১ বছর ধরে উৎসমুখ বন্ধ থাকায় মরাখালে পরিণত হয় রহিমপুরী খালটি। এ অবস্থায় ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিটি সম্পাদন হয়।
জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদ বলেন, ‘রহিমপুরী খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার হলে শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে। এতে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবে। খালের ভাটিতে থাকা হাওরাঞ্চলেও বোরো চাষাবাদ সম্ভব হবে।’
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর আগে পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু উৎসমুখ খনন করতে না পারায় খালের অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ ও পাম্প হাউস চালু করা যাবে। এতে আগামী শুকনো মৌসুমেই এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।’